পটুয়াখালীতে এমপি ফিরোজের বিরুদ্ধে নৌকা প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ১৫ নং চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী -২(বাউফল) আসনের সাংসদ আ.স.ম. ফিরোজের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী আমির হোসেন হাওলাদার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, ‘আমার বয়স প্রায় ৭০ বছর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আওয়ামী রাজনীতি করি। জেলার বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছি। মনোনয়ন পেয়ে এমপি ফিরোজ ভাইর সঙ্গে দেখা করি। কিন্তু তিনি আমাকে অনেক নেতা-কর্মীর সামনে তার ভাতিজা বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হক ওরফে আলকাস মোল্লাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেন। তিনি বলেন তুমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সামনে রেখে বলবে আমি অসুস্থ্য এজন্য নির্বাচন বর্জন করলাম। তখন আমি তাকে বলেছি ঢাকা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নৌকা প্রধানমন্ত্রীকে সংবাদ সম্মেলন করে দিয়ে আসি। তাতে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। এদিকে সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আমাকে বার বার হুমকী দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াতে বলা হচ্ছে। আমি না সরলে হত্যার হুমকী আসছে। এমন কি নৌকার কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে নির্বাচনের ২/৩ দিন আগে পঙ্গু করে দিবে। বিদ্রোহী সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা কোন মিছিল সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। বিদ্রোহী প্রার্থী আলকাস মোল্লা কয়েকটি মামলার মধ্যে একটি মামলার যাবৎ জীবন আসামী। বর্তমানে হাইকোর্টে মামলা চলমান আছে। একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেন? আলকাস একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ২০১৬ সালে ভোট পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এমপি সাহেবের ভাতিজা হওয়ার প্রভাব বিস্তার করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান হয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে আলকাস মোল্লা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কয়েক কোটি টাকার মাটি বিক্রি করেছেন। এখন আওয়ামীলীগ অফিস ব্যবহার করে আনারস মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। এমপি সাহেবের শ্লোগান দিয়ে আনারস মার্কায় ভোট চান। আলকাস মোল্লা সমাবেশ করে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছে চন্দ্রদ্বীপে শেখ হাসিনা চলে না, আ.স.ম ফিরোজ যা বলে সেটাই চলে। নৌকার পক্ষে যারা কাজ করবে ২১ জুনের পর তাঁদেরকে এলাকা থেকে বিতারিত করা হবে। আমি কালাইয়ার সন্তান কেউ যদি নৌকায় ভোট দাও তাহলে কালাইয়া আসতে পারবে না। এমপি সাহেবের বিপক্ষে গেলে চন্দ্রদ্বীপ বাসীর বাঁচার কোনো সুযোগ নাই। কারন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন তেতুলিয়া নদী বেষ্টিত উপজেলাসহ কোথাও যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ট্রলার। যেখানে খেয়া কিংবা ট্রলার থামে ওখানেই এমপি সাহেবের বাড়ি। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এমপি সাহেব না চাইলে আলকাস মোল্লার এমন কোনো ক্ষমতা নাই যে তিনি এক মিনিট টিকে থাকতে পারে। এমপি সাহেব উপজেলায় অবস্থান করে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় আমার মাঠে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক আলকাস মোল্লার পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমাকে এবং চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বাঁচান’।
এ বিষয়ে সাংসদ আ.স.ম. ফিরোজ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনো কলঙ্ক নাই, আমি নির্ভেজাল একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক সময় কুৎসা রটনা করে কিন্তু আমি এর মধ্যে কোনো পার্ট হইনা। যিনি এটি করতে চাচ্ছেন তিনি আসলে আমাকে নয় নিজেকে ছোট করছেন। আমি আমির হোসেন হাওলাদারকে যা বলছি তার ক্যাসেট আছে। শেষে বলছি আপনি যদি নির্বাচিত হন আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না।
এ সময় নৌকা প্রার্থীর সাথে ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা মোঃ হানিফ মাল, নুর ইসলাম মাতুব্বর, ফারুক মাঝি, সোহেল রানা, জহির উদ্দিন প্রমুখ।